মুহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ত্রুটির বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছেন ঢাবির বিএনপিপন্থী সাদা দলের শিক্ষকরা। পাশাপাশি এর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
২১ অক্টোবর (সোমবার) ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে,‘গতকাল ২০ অক্টোবর প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় “ক” ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের ত্রুটির ঘটনায় আমরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার কারণেই এমনটি হয়েছে বলে আমরা মনে করি। তাই এরূপ দায়িত্বহীন কাজের আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে,‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ জাতির অহংকার ও গর্বের প্রতিষ্ঠান। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য। কিন্তু আজ এ ভর্তি পরীক্ষার স্বচ্ছতা সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে। ইতিপূর্বে উপর্যুপরি তিন বছর ঘ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে এজন্য ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণ, অবৈধ ও অনিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধীনে পরিচালিত “মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে” ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা এবং ডাকসু’র বর্তমান জিএসের বিধিবহির্ভূত প্রক্রিয়ায় এম.ফিল কোর্সে ভর্তির ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও সুনাম যখন মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ, ঠিক তখনি ক ইউনিটের প্রথমবর্ষ সম্মান শ্রেণিতে ভর্তির পরীক্ষার ফলাফলে এ ভুল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি এবং গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ফলে কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত ফলাফল স্থগিত করেছেন বটে, কিন্তু আমরা একেই যথেষ্ট বলে মনে করি না।’
উল্লেখ্য যে, ‘ক’ ইউনিটের প্রশ্নপত্রে একাধিক ভুল থাকার বিষয়টিও ইতোমধ্যে সমালোচিত হয়েছে। আমরা মনে করি যাদের দায়িত্বহীনতার কারণে এ ঘটনাটি ঘটেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা উচিৎ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারা এদেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে পরম কাঙ্ক্ষিত বিষয়। এ কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া তীব্র প্রতিযোগিতামূলক। কারো গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে কোনো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভুলণ্ঠিত হোক এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণ করে সম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশোধিত ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং একই সাথে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ ত্রুটির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ২০ অক্টোবর (রবিবার) ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ফল প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং মোবাইলে ফলাফলে অসামঞ্জস্য থাকার অভিযোগ তোলেন অনেক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক। তখন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘ক’ ইউনিটের গণিত অংশের ফলাফলে অনেক পরীক্ষার্থীর ফলাফল ভুল হয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন, গণিত অংশের ফলাফল উল্টো দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ অনেক শিক্ষার্থীর গণিত অংশে ১০টি প্রশ্ন সঠিক ও ৩টি প্রশ্ন ভুল হয়েছে বলে তারা ভর্তি পরীক্ষার পর মিলিয়ে দেখেছিলেন। কিন্তু ফলাফলে দেখা যায়, বিষয়টি পুরো উল্টো। অর্থাৎ ৩টি সঠিক ও ১০টি ভুল দেখাচ্ছে। আবার অনেকে অন্য সব বিষয়ে ভালো নম্বর পেলেও গণিত অংশে ১৫টি ভুল উত্তর দেখাচ্ছে।
এরপর রাতে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল স্থগিত করা হয়। ২০ অক্টোবর (রোববার) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েটসাইটে ও বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থগিতের নোটিশ দেয় প্রশাসন।
রোববার রাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন ‘ক’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ চৌধুরী।