ঢাকাশুক্রবার , ১১ জুলাই ২০২৫
  1. সর্বশেষ

গণপরিবহণে নারী নিগ্রহ বন্ধে আইনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন!

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৮:২২ অপরাহ্ণ

Link Copied!

মোহাম্মদ মন্‌জুরুল আলম চৌধুরী।

“‘আর নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানদেরকে সম্মানিত করেছি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৭০)। এ আয়াত থেকে প্রমাণিত মানবিক সম্মান ও মর্যাদার বিচারে নারী ও পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীরাও মহান আল্লাহর সম্মানিত সৃষ্টি”। মানবজাতি মহান আল্লাহ্‌র সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টি। অথচ সেই সেরা সৃষ্টির কতিপয় পুরুষের কাছে নারীদের ইজ্জৎ আভ্রু মান সম্মান মর্যাদা প্রতিনিয়ত ভুলন্ঠিত হচ্ছে। নারী আজ ঘরে বাইরে শিক্ষাঙ্গনে কর্মস্থলে যানবাহনে মাদ্রাসায় কোথাও নিরাপদ নয়। তবে নারীরা সবচেয়ে বেশি যৌন নিপীড়ন, হেনস্থা, হয়রানী, উত্যক্তের শিকার হচ্ছে গণ পরিবহণে। বাসে যাতায়াতকারী নারীদেরকে টার্গেট করেন যুবক থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী মানুষ এমনকি ষাট বছরের বুড়ো মানুষও। যৌন হয়রানি হেনস্থার মধ্যে রয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে বারবার স্পর্শ করা বা চিমটি কাটা, নারীর সংবেদনশীল স্থানে স্পর্শ করা, কাছ বা গা- ঘেঁষে দাঁড়ানো বা আস্তে ধাক্কা দেয়া, গায়ের সাথে ঘষাঘষি করা, নারীদের চুল স্পর্শ করা, কাঁধে হাত রাখা, গুঁতো দেয়া, ধাক্কাধাক্কি করা, চোখ টিপ মারা, জিহ্বা বের করে বাজে ইঙ্গিত দেয়া, কাপড় ছিঁড়ে দেয়া, সিটে চুইংগাম লাগিয়ে দেয়া ইত্যাদি। এক তথ্য থেকে জানা যায়, “বাংলাদেশের শতকরা ৮৮ জন নারী রাস্তায় চলার পথে যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্যের মুখোমুখি হন৷এদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ গণপরিবহণের চালক ও হেলপারদের দ্বারা হয়রানিমূলক মন্তব্যের শিকার হন”৷নারীশিশু কিশোরী তরুণী যুবতী বয়স্কা মহিলা পর্দানশীন মহিলা কেউ এসব কুলাঙ্গারের হাত থেকে রেহায় পায়না। নারী দেখলেই সবাই যেন হুমড়ি খেয়ে পড়তে চায় গায়ের ওপর। অসহায় দরিদ্র নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত্ব নারীদের কাছে গণপরিবহণ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই বাসে যৌন হয়রানির শিকার হলে বেশিরেভাগ চুপ করে থাকেন বা নিরবে তা সহ্য করেন অথবা স্থান পরিবর্তন করেন এমনকি না দেখার বা বুঝার ভান করে থাকেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরণের নির্যাতন নারীদের জন্যে ভয়ংকর এবং ভীষণ মানসিক যন্ত্রণার যা সারা জীবন তাঁদেরকে হীনমন্যতায় ভোগায়। সেভ দ্য রোড নামের একটি বেসরকারি সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনে যেসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, যা খুবই বেদনাদায়ক ও ভীতিকর। সংস্থাটি জানায়,“২০১৭-২২ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত গণপরিবহন ও অন্যান্য বাহন এবং বাসস্ট্যান্ড-ট্রেন স্টেশনে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪৬০১টি, এর মধ্যে ধর্ষণ ৩৫৭ ও খুনের শিকার হয়েছেন ২৭ জন। বাংলাদেশের ৩১টি জাতীয় দৈনিক, বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত-প্রচারিত তথ্যর পাশাপাশি সারাদেশে সেভ দ্য রোডের স্বেচ্ছাসেবীদের তথ্যানুসারে প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, এদেশের বাসস্ট্যান্ডগুলো স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ না হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির নরপশু ও কুরুচিপূর্ণ মানুষ নারীদের পোশাক-আশাক-চালচলন নিয়ে যেমন বিভিন্নভাবে কটূক্তি করে, তেমনি নির্যাতন-নিপীড়ন করতেও পিছপা হয় না, যা মেনে নেয়া কঠিন”। অবশ্য ইতোমধ্যে গণপরিবহনে বাসস্ট্যান্ড-ট্রেন স্টেশনসহ বিভিন্ন পথে নির্যাতন-নিপীড়ন-ধর্ষণ-খুন বন্ধের লক্ষ্যে সেভ দ্য রোডের পক্ষ থেকে গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের প্রতি ৩টি সুপারিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো হচ্ছে, ১. রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে ‘নারীর প্রতি সম্মান’ শীর্ষক সচেতনতা তৈরি করা; সেখানে ধর্মীয় অনুশাসন, নীতি-আদর্শ-সভ্যতার আলোকে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা এবং তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার এবং প্রথম শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর শ্রেণির পাঠ্যবইতে সংযুক্ত করা। ২.মালিক-চালক-হেলপার-সুপারভাইজারসহ সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই যাত্রীদের প্রতি আচরণ প্রশিক্ষণ এবং অসদাচরণ করলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা। ৩. প্রতি ৫ কিলোমিটার অন্তর পুলিশ বুথ স্থাপন, সব সড়ক-মহাসড়ক-সেতুকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা। ৪. দূরপাল্লার বাসগুলোতে টিকেটে যাত্রীদের মোবাইল নম্বরসহ শনাক্তকারী তথ্য লিপিবদ্ধ করা। ৫. যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো ও নামানো থেকে বিরত থাকা। ৬. গণপরিবহনে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা। ৭. সড়ক নিরাপত্তায় সড়কে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে জনবল নিয়োগ ও তাদের উপযুক্ত সরঞ্জামসহ প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ। নারীর সুরক্ষা এবং নারী বান্ধব গণপরিবহণের জন্যে উল্লেখিত সুপারিশগুলো অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি সময় থাকতে এদের দ্রুত প্রতিহত করা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাটা খুব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমাদের মনে রাখা উচিৎ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ১০ ধারা অনুযায়ী, “যদি কোন ব্যক্তি অবৈধভাবে তার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার শরীরের যে কোন অঙ্গ বা কোন বস্তু দ্বারা কোন নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোন অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোন নারীর শ্লীলতাহানি করেন তা হলে তার এই কাজ হবে যৌন পীড়ন এবং এর জন্য উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ (১০) বছর কিন্তু অন্যুন তিন (৩) বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন”৷ প্রকৃতপক্ষে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের পাশাপাশি সমাজে মানুষের সাধারণ ও ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ এবং সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমে মানবিক নৈতিক আচরণ এবং সুন্দর মন-মানসিকতা এবং পরিবেশ গড়ে তোলা আবশ্যক। নারীর প্রতি স্নেহ শ্রদ্ধা সম্মান প্রদর্শন এবং মর্যাদা দানের পাশাপাশি সামাজিক মানবিক নৈতিক মুল্যবোধ অবক্ষয় রোধ করার জন্যে নোংরা অশ্লীল বিদেশী ও বিজাতীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ এবং নিষিদ্ধ করার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবী। তাছাড়া পরিবার ও সমাজে দেশজ কৃষ্ঠি সভ্যতা মননশীলতা ও সৃষ্টিশীলতার বিকাশ উন্মেষ এবং প্রসারের মাধ্যমে নেশা মাকাসক্তিসহ সকল ধরণের অন্যায় এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিহার করা উচিৎ। পরিবার সমাজ দেশ জাতি এবং রাষ্ট্রকে নারীর প্রতি অনুকূল সুস্থ সুন্দর বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করার দায় ও দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। মানুষের ভেতরের পশুত্বকে হত্যা করে বিবেক বিচার বুদ্ধি চেতনা এবং মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করতে না পারলে নারীদের জন্য গণপরিবহণ কখনোই নিরাপদ স্বস্তিকর এবং নারী-বান্ধব হয়ে উঠবে না। নিঃসন্দেহে গণপরিবহণে নারী নিগ্রহ বন্ধে আইনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন।

500 Views

আরও পড়ুন

এসএসসির ফলাফল বিপর্যয়: দায় কি শুধু শিক্ষার্থীদের?

শান্তিগঞ্জে উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের অর্থায়নে সেলাই মেশিন ও পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী বিতরণ

দাখিল পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান: তা’মীরুল মিল্লাত টঙ্গী শাখার সাফল্য ও হতাশা একসাথে

আজ এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল

১৪ জুলাই পাবলিক হল ময়দানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশাল জনসভা

ইসলামী ছাত্রশিবির নীলফামারী শহর শাখার নতুন দায়িত্বে যারা

টেকনাফে মিনি ড্রাম-ট্রাকে মিললো৫০হাজার ইয়াবা,আটক-২

মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে সমন্বিত সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভা

গাজীপুরে বিএনপি নেতা সাথী বহিষ্কার ও গ্রেফতার সমীকরণে : নিরব ক্ষোভে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা

কাপাসিয়ায় খাল বিলে অভিযান চালিয়ে ২৫ টি ম্যাজিক চাই ও জাল পুড়িয়ে ধ্বংস

মাদারীপুর জেলা জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার উদ্যোগে সাগরকন্যা কুয়াকাটা ভ্রমণ

কেরোয়ার একমাত্র রাস্তাটি আজ জনভোগান্তির প্রতীক