আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আবার তাদের প্রার্থনা করার জন্য আদেশ করেছেন। আর বান্দা যেকোনো সময়ে আল্লাহর কাছে যেকোনো জিনিস চাইতে পারে। আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ খুশি ও আনন্দিত হন।
আল্লাহ তাআলা নিজেই পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৬০)
এমন কিছু আমল আছে, যার দ্বারা সরাসরি আসমানের দরজা খুলে যায়। এখানে সেগুলো উল্লেখ করা হলো—
এক. গভীর রাতে যে আল্লাহকে স্মরণ করে
গভীর রজনীতে পুরো দুনিয়া যখন ঘুমের ঘোরে হারিয়ে যায়; ঠিক সে সময়ে কোনো বান্দা ওঠে আর আল্লাহকে ডাকে, তার জন্য আসমানের দরজা খুলে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে; আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়। আমাদের রব ঘোষণা করতে থাকেন, ‘আমার কাছে প্রার্থনা করবে কে? আমি তার প্রার্থনা কবুল করব।’ এভাবেই ফজর পর্যন্ত আহ্বান করতে থাকেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৩৮২১)
দুই. যে মানুষের প্রয়োজন পূরণ করে
বিপদাক্রান্ত মানুষের প্রয়োজন পূরণ করলে আল্লাহ তাআলা আসমানের দ্বার খুলে দেন, অন্যথায় তার জন্য আল্লাহ তাআলা আসমানের দরজা বন্ধ করে দেন। আমর ইবনে মুররা (রা.) থেকে বর্ণিত, মুআবিয়া (রা.)-কে আমর ইবনে মুররা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, গরিব-মিসকিন ও নিজ প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশে আগমনকারী লোকের জন্য যে নেতা নিজের দরজা বন্ধ করে রাখে, এ ধরনের লোকের দারিদ্র্য, অভাব ও প্রয়োজনের সময় আল্লাহ তাআলাও আকাশের দরজা বন্ধ করে রাখবেন। মুআবিয়া (রা.) এ কথা শোনার পর থেকে এক লোককে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশে নিযুক্ত করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৩২)
তিন. লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ বলে যে
কোনো ব্যক্তি যখন এখলাসের সঙ্গে ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ’ বলবে তার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো বান্দা সততার সঙ্গে ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বললে তার জন্য আকাশের দ্বারগুলো খোলা হয়। ফলে উক্ত কালিমা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যতক্ষণ সে কবিরা গুনাহ ত্যাগ করে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯০)
চার. নামাজের জন্য অপেক্ষা করে যে
যে ব্যক্তি নামাজের জন্য অপেক্ষারত থাকবে, তার জন্য আল্লাহ তাআলা আসমানের দরজা খুলে দেন। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে মাগরিবের নামাজ পড়লাম। তারপর যারা চলে যাওয়ার চলে গেলেন এবং যারা থেকে যাওয়ার থেকে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এত দ্রুতবেগে এলেন যে তাঁর দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হতে লাগল। তিনি তাঁর দুই হাঁটুর ওপর ভর করে বসে বলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের রব আসমানের একটি দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের কাছে তোমাদের সম্পর্কে গর্ব করে বলছেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা এক ফরজ আদায়ের পর পরবর্তী ফরজ আদায়ের অপেক্ষা করছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮০১)
পাঁচ. আজানের সময় বান্দাদের জন্য
আজানের মুহূর্ত ও যুদ্ধের ময়দানে সারিরত অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তার বান্দার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেন। সাহল ইবনু সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত, দুটি মুহূর্ত এরূপ আছে সে সময় আসমানের দরজা খোলা হয় এবং ওই দুই মুহূর্তে প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কদাচিৎ ফেরত দেওয়া হয়; নামাজের আজানের মুহূর্ত এবং আল্লাহর পথে জিহাদের কাতার ঠিক করার মুহূর্ত। (মুআত্তা ইমাম মালিক, হাদিস : ১৫২)
ছয়. ইফতারকারীদের জন্য
যে বাদশা ইনসাফের সঙ্গে বিচারকার্য করে এবং রোজাদার যখন ইফতার করে সে মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা আসমানের দরজা খুলে দেন। এক হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। রোজাদার যতক্ষণ ইফতার না করে, সুবিচারক শাসকের দোয়া এবং মজলুমের (নির্যাতিতের) দোয়া। আল্লাহ তাআলা ওই দোয়াগুলো মেঘমালার ওপর (আকাশের) তুলে নেন এবং এর জন্য আকাশের দ্বারগুলো খুলে দেওয়া হয়। রাব্বুল আলামিন বলেন, আমার মর্যাদার শপথ! আমি নিশ্চয়ই তোমার সাহায্য করব—কিছু দেরি হলেও। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)